বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ হচ্ছে আমাদের মূল কথা। স্বাধীনতার যুদ্ধ আমাদের মূল কথা, ওখানে কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমাদের কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রই চাই।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক এই আলোচনাসভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে এবং যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের অগ্রযাত্রায় বিশ্বাস করে না, তারা আবার সক্রিয় হচ্ছে’ তিনি অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অযথা বিলম্ব না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’ বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট শক্তি ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে এবং ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে বলে সতর্ক করেন বিএনপি মহাসচিব। সেই সঙ্গে তিনি দেশে মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই ভয়ানকভাবে বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নির্দিষ্টভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বলতে চাই না, শুধু বলব আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, সেটি আমরা হারিয়ে ফেললে বাংলাদেশ আরো বহু বছর পিছিয়ে যাবে। প্রতিবার একটা করে অভ্যুত্থান হবে, জনগণ প্রাণ দেবে; একটা সুযোগ তৈরি হবে এবং আমরা দায়িত্বহীনতার কারণে সে সুযোগ হারিয়ে ফেলব, এটা হতে দেওয়া উচিত নয়।’
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আমরা বিচার চাই, সংস্কার চাই এবং সংস্কার সম্পন্নের জন্য নির্বাচনের চাই। নির্বাচন ছাড়া সংস্কার সম্পন্ন হবে না।’ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর যে রকম পরিবর্তন আমরা আশা করেছিলাম, সে রকম পরিবর্তন হয়নি।’ এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে ছিলেন এমন ৯০ ভাগ মানুষের নাম কেউ জানে না। আমরা অনেকে রাজনৈতিক স্বার্থে গণঅভ্যুত্থানের অবদানকে ছোট করে ফেলছি।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘প্রশাসনের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টাদের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল প্রত্যাশা তারা পূরণ করতে পারেননি। ১১ মাসে এই সরকারের কাজের ওপর যদি মার্ক দিতে বলা হয় তাহলে আমি ১০এর মধ্যে ৪এর কথা বলব।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল বিভেদের রাজনীতি না করা। কিন্তু সেটি এখনো চলছে। উচিত ছিল হিংসা বিভেদের রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশের জনগণের জন্য পলিসিনির্ভর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা। প্রত্যাশা ছিল এমন বিচারকাঠামো যেখানে বিগত দিনের গুম-খুন হওয়া মানুষগুলো তাদের বিচারের পাবে। সেটি এখনো দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না।’
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির তানিয়া রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণফোরামের এম মিজানুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, বাংলাদেশ জাসদের নাজমুল হক প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নঈম জাহাঙ্গীরসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
Post a Comment