পুরান ঢাকার নৃশংসতার পেছনে ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বের কথা বলা হলেও মিটফোর্ড এলাকার বেশিরভাগ লোক সোহাগকে ব্যবসায়ী মানতেই রাজি নন। লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেও তারা বলছেন, সিন্ডিকেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই লাশ হতে হয়েছে সোহাগকে।


তাদের দাবি, অবৈধ তার ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো সোহাগ। এ সিন্ডিকেটের নির্যাতনের শিকার কয়েক জনের সঙ্গে কথাও হয় প্রতিবেদকের; এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও চিত্র এসেছে একাত্তরের হাতে।


পুরান ঢাকার চায়নাপট্টি ও রজনী বোস লেনকে ভাঙারি ব্যবসার সদর দপ্তর বললেও ভুল হবে না। যেখানে সারাদেশ থেকে আসে নানা ভাঙারি পণ্য, সেই তালিকায় যেমন আছে তামা, পিতল, দস্তা, সীসা, প্লাস্টিকের মতো বৈধ পণ্য; তেমন আছে চোরাই তারসহ আছে নানা অবৈধ অ্যালুমিনিয়াম পণ্য। আর এই অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই গত ৯ জুলাই ঘটে যায় নৃশংস হত্যার ঘটনা।


সোহাগ খুন হওয়ার পর প্রথমে চাঁদাবাজি এবং পরে বলা হয় এটি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। পুলিশও কথা বলছে প্রায় একই সুরে। তবে একাত্তরের অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা।


চায়নাপট্টি ও রজনী লেনের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী সোহাগকে ব্যবসায়ী বলতেই রাজি নন। অবৈধ তার ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো সোহাগ, যা নিয়েই মহিন ও টিটো গ্রুপের সঙ্গে এতো গন্ডগোল।


দলবল নিয়ে চলাফেরা করতো সোহাগ, ৫ আগস্টের পর সবাই একসঙ্গে থাকলেও পরবর্তীতে দূরত্ব বাড়ে। এ সিন্ডিকেটের হাতে মাঝেমধ্যেই নির্যাতনের শিকার হতো ব্যবসায়ীরা। এমন একটি ভিডিওচিত্র এসেছে একাত্তরের হাতে।


যেখানে দেখা যায়, চেয়ার দিয়ে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করছে সোহাগ। গত জানুয়ারি মাসের ঘটনা এটি। সেই ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে তাকে না পাওয়া গেলেও ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। পাওনা চার লাখ টাকা চাওয়ায় সোহাগের রোষানলে পড়তে হয়েছিলো ফরিদকে।


এই সিন্ডিকেটের হাতে জীবন খুইয়েছে এমন স্বজনেরও দেখা মেলে।


তবে সোহাগের সাথে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার বিচার চায় মিটফোর্ড এলাকার সব ব্যবসায়ী। সেইসঙ্গে তারা চায় সিন্ডিকেটমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা।


প্রকাশ্যে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোববার (১৩ জুলাই) আরো দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট গ্রেপ্তার করা হলো সাত জনকে। হত্যা মামলায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিটও করেছে এক আইনজীবী।


পুলিশ ও র‍্যাব জানিয়েছে, সোহাগ হত্যার ঘটনাটি গত বুধবারের (৯ জুলাই) এবং এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে বৃহস্পতিবার। কিন্তু এর বীভৎসতার দিকটি সামনে আসে শুক্রবার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার মধ্য দিয়ে।


সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (যেটি মিটফোর্ড হাসপাতাল নামেও পরিচিত) একটি গেটের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে সংঘটিত ঘটনায় যারা জড়িত ছিলেন তারা বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে।


এরপর সংগঠন তিনটি থেকে পাঁচ জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।


ঘটনার যে ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে আছে তাতে দেখা যায়, পিটিয়ে আঘাতের পর ওই ব্যক্তির বিবস্ত্র শরীরে পাথরখণ্ড দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে অন্তত দুই জনকে ওই ব্যক্তির শরীরের ওপর উঠে লাফাতে গেছে ভিডিও ফুটেজে।

নিহত ব্যক্তির বোন মামলার এজাহারে জানিয়েছেন, তার ভাই ঢাকার রজনী বোস লেন এলাকায় অনেক দিন ধরেই ভাঙারি পণ্যের ব্যবসা করতেন। তার সঙ্গে ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মামলার আসামিদের বিরোধ চলছিলো।


আসামিরা ওই ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুদামে তালা দেওয়া ছাড়াও তাকে এলাকাছাড়া করতে বিভিন্ন সময় হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলো বলেও এজাহারে বলা হয়েছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post