একদিন অনাহারে থাকার পর কমলাপুর রেলস্টেশনে বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করছিল ১২ বছর বয়সী এক কিশোর। দুরুদুরু বুকে স্টেশনে থাকা অন্য ২ যাত্রীর কাছে জানতে চায়, ‘বরিশালের ট্রেন কখন ছাড়বে?’ তারা জানাল, বরিশালে কোনো ট্রেন যায় না। এরপর এক কথায়, দুই কথায় বাকি ২ যাত্রীর সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। একপর্যায়ে কিশোরটি জানায়, সে অনাহারে। এ কথা শুনে অপর দুই যাত্রী তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। এরপর রাজধানীর যাত্রাবাড়ির একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে তার মরদেহ পাওয়া যায়।


শনিবার (১২ জুলাই) রেলস্টেশন থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার একদিন পর সেই কিশোরের অর্ধনগ্ন মরদেহ উদ্ধার হয়। তার পশ্চাদেশ, মুখের ঠোঁটের অংশ ও ডান চোখ আঘাতের কারণে অস্বাভাবিকভাবে ফোলা ছিল। যদিও এই কিশোরের নাম-পরিচয় কিছু জানা যায়নি। তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মর্মান্তিক এই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করেছে। ধরতে পেরেছে হত্যায় যুক্ত সন্দেহে আল আমিন নামে এক মাদকাসক্ত যুবককে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন আল আমিন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।


স্বীকারোক্তির তথ্যানুসারে, এই ঘটনায় সাদ্দাম নামে আরও একজন জড়িত। সে বর্তমানে পলাতক।


আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, আল আমিন (৩৪) ও সাদ্দাম মাদকাসক্ত। তারা কমলাপুর রেলস্টেশনে থাকত। গত ১২ জুলাই সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে অজ্ঞাতনামা ভুক্তভোগী কিশোরের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই কিশোর আল আমিন ও সাদ্দামের কাছে জানতে চায়, বরিশালের ট্রেন কখন ছাড়বে। তারা জানায়, বরিশালে ট্রেন যায় না। একপর্যায়ে সেই কিশোর বলে, ‘একদিন ধরে কিছুই খায় নাই।’ তখন আল আমিন তাকে রেলস্টেশনের পাশ থেকে খাবার ও জুতা কিনে দেয়। কিশোরকে সারাদিন তাদের সঙ্গে রাখে। পরে সন্ধ্যার পরে তাকে নিয়ে প্রথমে আল আমিন যাত্রাবাড়ির একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। তখন হোটেলের বিদ্যুৎ ছিল না। কিছুক্ষণ পরে সাদ্দাম হোটেলে যায় এবং দুজন পালাক্রমে বলাৎকার করে। এতে সেই কিশোর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় নির্যাতন সইতে না পেরে ঘাতকদের কাছে বারবার মুক্তি চায়। এরপরও মন গলেনি আল আমিন ও সাদ্দামের।


বিপিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেখানে দুজন পর্যায়ক্রমে অস্বাভাবিক উপায়ে সেই কিশোরের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে ফের একই কাজ করতে চাইলে কিশোর নিষেধ করে এবং নিজে অসুস্থ বলে জানায়। এরপর আল আমিন ও সাদ্দাম তাকে একাধিকবার নির্যাতন করে এবং বলাৎকার করতে চান। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রাণ যায় কিশোরের।


এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের একটি দল। দলটির নেতৃত্বে থাকা উপপরিদর্শক মো. কবির হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘দু-মুঠো ভাতের জন্য একটা মানুষের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। অপরজনকে গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তবে ভুক্তভোগী কিশোরের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার বাড়ি বরিশাল জেলায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিচয় নিশ্চিত করতে ভিকটিমের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে এবং পিবিআই বরিশাল জেলা শাখার সহায়তায় অনুসন্ধান চলছে।’


Post a Comment

Previous Post Next Post