সরাইলী বর্বরতা যেন থামছেই না। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার স্বাক্ষ্মী হলো সাবেক মার্কিন সেনা। সূত্রের খবর, গাজায় নিযুক্ত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন-এর সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা সাবেক মার্কিন সেনা অ্যান্থনি অ্যাগুইলার একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন— যেখানে “গাজার ছোট্ট আমির” নামে পরিচিত এক ফিলিস্তিনি শিশু ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়।- খবর মিডল ইস্ট আইয়ের
অ্যাগুইলারের বর্ণনা অনুযায়ী, গত ২৮ মে আমির নামের ওই শিশুটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর খাবারের সন্ধানে ১২ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এসেছিল, খালি পায়ে, ক্ষীণ শরীর নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সে মাটিতে পড়া সামান্য কিছু ভাত আর ডাল কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়।
অ্যান্থনি বলেন, শিশু আমির এক হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্তে তার কাছে এসে নিজের ব্যাগ মাটিতে রাখে, তারপর ছোট্ট হাতদুটি তার মুখের ওপর রাখে, তার হাত চুমু খায় এবং ইংরেজিতে ধন্যবাদ জানায়। এরপর আমির আবার নিজের জিনিস তুলে নিয়ে ভিড়ের দিকে ফিরে যায়।
মাত্র কয়েক মিনিট পর, যখন সে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন ইসরায়েলি সেনারা গ্যাস আর গুলি ছুঁড়ে হামলা চালায়। সেখানেই আমির গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। সাবেক সেনা অ্যাগুইলার আরও বলেন, “ওই দিনটা গাজার অন্য দিনের চেয়ে আলাদা ছিল না—শুধু মৃত্যুটি এসেছিল আরও তাড়াতাড়ি।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সংস্থা একে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছে। এবার ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি মানবাধিকার সংস্থা এ প্রতিবেদন দেওয়ার পর দেশটির ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের অপরাধের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা; গণহারে বাস্তুচ্যুত করা এবং মানুষকে অনাহারে রাখা। এ ছাড়া ইসরায়েলের হামলায় ঘরবাড়িসহ বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসের ফলে ফিলিস্তিনিরা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বতসেলেমের পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, ‘আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা স্পষ্ট—একটি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।’ জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবাইকে নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে—গণহত্যার মুখে আপনি কী করবেন?’
Post a Comment