প্রায় ৪০ বছর আগে স্নাতক শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় প্রতি রোববার রাতে ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যায় পড়তেন ড. লুক বডোইন। সেই অভিজ্ঞতাই তাকে এক নতুন পদ্ধতির জন্ম দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল, যার নাম এখন ‘কগনিটিভ শাফলিং’।

ঘুমের সংকেত ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা

তৎকালীন একজন কগনিটিভ সাইকোলজির শিক্ষক দৃষ্টিগত চলাচল শনাক্তকরণ নিয়ে একটি তত্ত্ব পড়ান, যা থেকে অনুপ্রেরণা পান বডোইন। তিনি ভাবলেন—“যদি আমি ঘুমের সূচনার পেছনে থাকা মস্তিষ্কের ‘নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ বুঝতে পারি, তাহলে হয়তো একে ফাঁকি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া সম্ভব।” পরবর্তীতে এই কৌশল তিনি নিজে ব্যবহার করে দেখেন এবং সফল হন।

কগনিটিভ শাফলিং কীভাবে কাজ করে?

এই পদ্ধতিতে আপনাকে এমন এক শব্দ বেছে নিতে হয় যেটির প্রতিটি অক্ষরের জন্য আপনি ৫–৮ সেকেন্ডের জন্য অ-আবেগপূর্ণ, এলোমেলো কিছু শব্দ কল্পনা করবেন। যেমন, “পিয়ানো” শব্দটি নিয়ে আপনি ভাবতে পারেন—P থেকে “পিয়ার, প্যারাস্যুট”; I থেকে “আইসক্রিম, ইগলু” ইত্যাদি। এসব শব্দের সঙ্গে দৃশ্য বা মুভমেন্ট কল্পনাও করা যেতে পারে।


ড. বডোইন বলছেন, “এই এলোমেলো ভাবনা মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক ঘুমে ঢোকার সময়কার চিন্তার মতো অবস্থায় নিয়ে যায়, যেখানে অগোছালো ‘মাইক্রোড্রিম’ বা খণ্ডিত স্বপ্ন দেখা যায়। এই অবস্থা ঘুমের সূচনা ত্বরান্বিত করে।”


ঘুমের জন্য মস্তিষ্ককে ‘বোকা বানানো’

ঘুম বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম জোর করে আনা যায় না, বরং পরিবেশ এবং মানসিক অবস্থার মাধ্যমে সেটি আসতে সাহায্য করতে হয়। কগনিটিভ শাফলিং এ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে কারণ এটি চিন্তার কেন্দ্র থেকে উদ্বেগ ও চাপ সরিয়ে নিরপেক্ষ ও শান্ত চিন্তা স্থাপন করে।

গবেষণা কী বলছে?

২০১৬ সালে ড. বডোইন একটি গবেষণায় দেখান, যারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন তাদের ঘুমের মান এবং ঘুমিয়ে পড়ার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। এতে অংশ নিয়েছিল ১৫৪ জন কলেজ শিক্ষার্থী।


কীভাবে শুরু করবেন কগনিটিভ শাফলিং?


একটি সাধারণ শব্দ বেছে নিন


প্রতিটি অক্ষরের জন্য কয়েকটি এলোমেলো শব্দ ভাবুন


শব্দের মধ্যে কোনো সংযুক্তি না রেখে মস্তিষ্ককে এলোমেলো চিন্তায় ব্যস্ত রাখুন


অতিরিক্ত ২০ মিনিট কৌশল চেষ্টা করেও ঘুম না এলে বিছানা ছাড়ুন এবং আরেকটু পরে আবার চেষ্টা করুন


সতর্কতা

এটি ঘুমজনিত সমস্যার চিকিৎসা নয় বা CBT-I এর বিকল্প নয়। ক্যাফেইন, স্ক্রিন টাইম, অ্যালকোহল ইত্যাদি দূর না করলে কগনিটিভ কৌশল বিশেষ কাজে দেবে না।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন

নিয়মিত ঘুমের সময় ঠিক রাখা, আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি এবং ভালো স্লিপ হাইজিন বজায় রাখার সঙ্গে এই কৌশল ব্যবহার করলে ফল পাওয়া সম্ভব।

Post a Comment

Previous Post Next Post