গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন ভারতীয় গায়ক জুবিন গার্গ, দুবার তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রথমটি হয় সিঙ্গাপুরে, দ্বিতীয়টি আসামের গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। তবে তাঁর মৃত্যু ঘিরে উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। এবার অভিযোগ উঠেছে, গায়ককে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে।



জুবিনের মৃত্যুর ঘটনায় আসাম সরকার সিআইডির তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে, অন্যদিকে গুয়াহাটি হাইকোর্ট তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিশনও গঠন করেছে। জুবিনের মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার দাবি করে সোচ্চার তাঁর লাখো ভক্ত। গতকাল জুবিন গার্গকে বিষপ্রয়োগের অভিযোগের তদন্ত সম্পর্কে আপডেট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত শর্মা।



তিনি বলেছেন, গায়কের ময়নাতদন্তের সময় যে ভিসেরার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তাঁর রিপোর্ট আসবে ১০ অক্টোবর, ওই দিনই জানা যাবে জুবিনকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল কি না, যেমনটা দাবি করেছেন গায়কের মৃত্যু মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত শেখর জ্যোতি গোস্বামী। মুখ্যমন্ত্রী আরও যোগ করেন, শেখর জ্যোতির বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। সেখানেই বিষপ্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছে অভিযুক্ত। বিষপ্রয়োগের বিষয়টি পুলিশ উত্থাপন করেনি।



সুতরাং এই বিষপ্রয়োগের তত্ত্বটি অভিযুক্ত শেখর জ্যোতি গোস্বামী নিজেকে বাঁচাতে এবং অন্যকে দোষারোপ করতে বলছেন নাকি সত্যিই তাঁর দাবির পেছনে কোনো সারবত্তা রয়েছে, তা জানা যাবে ভিসেরা রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে। এক বিবৃতিতে হেমন্ত শর্মা বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা অনুসারে কেস ডায়েরিতে সবকিছু রেকর্ড করাই পুলিশের দায়িত্ব। কেউ ইতিবাচক কথা বলবে, আবার কেউ নেতিবাচক কথা বলবে; পুলিশ সবকিছু নথিভুক্ত করতে থাকবে। তবে এগুলো পুলিশের বিবৃতি নয়; এগুলো শুধু সাক্ষীর জবানবন্দি মাত্র।’



বিষক্রিয়ার খবরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি অভিযুক্তদের জবানবন্দি। তিনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই জবানবন্দি দিয়েছেন নাকি অন্য কাউকে দোষারোপ করেছেন, তা তদন্তের সময় জানা যাবে। জুবিনের মৃত্যুর দিন ইয়টে অসমীয়া সম্প্রদায়ের যাঁরা ছিলেন, সবাইকে তদন্তে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।



সরকারি নথি অনুসারে, প্রয়াত গায়কের ব্যান্ডমেট শেখর জ্যোতি গোস্বামী অভিযোগ করেছেন যে গায়ককে সিঙ্গাপুরে ‘বিষ’ দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা ও উত্সবের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত ‘ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের ষড়যন্ত্র’ গোপন করার জন্য একটি বিদেশি ভেন্যু বেছে নিয়েছিলেন। গায়কের মৃত্যুর তদন্তের অংশ হিসেবে সিদ্ধার্থ শর্মা ও শ্যামকানু মহন্ত উভয়কেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে শেখর জ্যোতি গোস্বামী ও সহ-গায়ক অমৃতপ্রভা মহন্তকেও। শেখর জ্যোতি গোস্বামীর অভিযোগ, তাঁর মৃত্যুকে দুর্ঘটনাজনিত বলে তুলে ধরার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। শনিবার সন্ধ্যায় আসাম পুলিশ সার্ভিসের (এপিএস) অফিসার সন্দীপন গার্গ, যিনি জুবিন গার্গের সঙ্গে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন, তিনি গুয়াহাটিতে সিআইডির সামনে হাজির হন।



এদিকে পুলিশের তদন্তেই উঠে এসেছে নতুন আরেকটি তথ্য। সিঙ্গাপুরের হোটেলে জুবিনের ঘরে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল দুই অচেনা ব্যক্তিকে। জুবিনের হোটেলের ঘরে কীভাবে এই দুই আগন্তুককে ঢুকতে দেওয়া হলো? কারা এরা? এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। জানা যাচ্ছে, জুবিন ছাড়া এই ঘরে ঢোকার চাবি ছিল তাঁর আপ্তসহায়ক সিদ্ধার্থ শর্মার কাছে।



তাহলে কি তাঁর সাহায্যেই এই দুই আগন্তুক ঢোকেন গায়কের ঘরে?

সিদ্ধার্থের দাবি, ‘নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়ান ফেস্টিভ্যাল’-এর আয়োজক শ্যামকানু মাহাতো এই অধিকার দিয়েছিলেন দুই আগন্তুককে। আবার শ্যামকানুর দাবি, সিদ্ধার্থের সাহায্যেই ওখানে ঢুকতে পেরেছিলেন দুই আগন্তুক। জুবিনের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা আগে তাঁর ঘরে এসে দেখা করেছিলেন দুই আগন্তুক।


তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

Post a Comment

Previous Post Next Post