ইসরাইলের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের শহিদুল আলমসহ গাজাগামী জাহাজবহর থেকে আটক মানবাধিকারকর্মীদের।


বুধবার রাতে ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।


বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার গাজা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলার নয়টি জাহাজ আটকে দেয় ইসরাইলি নৌবাহিনী। এ সময় প্রায় দেড়শো স্বেচ্ছাসেবীকে আটক করা হয়। তেলআবিব দাবি করেছে, বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ আছেন এবং শিগগিরই নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।


ওই নৌবহরের কনশানস নামের একটি জাহাজে ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রশিল্পী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। বর্তমানে তিনি অন্যান্য অধিকারকর্মীদের সঙ্গে ইসরাইলে আটক অবস্থায় আছেন।


ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন আয়োজিত নয়টি জাহাজের এই বহরটি দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে গাজামুখী যাত্রা শুরু করে। একটি বড় জাহাজে ছিলেন প্রায় ১০০ কর্মী এবং বাকি আটটি ছোট নৌযানে আরও ৫০ জন। আয়োজকদের দাবি, বহরে অন্তত দুজন ইসরাইলি নাগরিকও ছিলেন।



বুধবার ভোরে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভূমধ্যসাগরে ইসরাইলি নৌবাহিনীর বিশেষ ইউনিট ‘শায়েতেত ১৩’ দ্রুত অভিযান চালিয়ে জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। কনশানস নামের ৬৮ মিটার দীর্ঘ যাত্রীবাহী জাহাজে নামার জন্য কমান্ডোরা হেলিকপ্টার থেকে রশি বেয়ে নামলে তখনই আন্তর্জাতিক মহলে ওঠে সমালোচনার ঝড়।



অন্যদিকে, ফ্লোটিলা সংগঠকরা অভিযোগ করেছেন, ইসরাইলি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে এবং তাদের আটটি নৌযান অবৈধভাবে আটক ও ছিনতাই করা হয়েছে। এফএফসি জানায়, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের আটক করে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, নৌবহরটি এক লাখ দশ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের ওষুধ, রেসপিরেটরি সরঞ্জাম ও পুষ্টি সহায়তা বহন করছিল,যা গাজার হাসপাতালগুলোর জন্য পাঠানো হচ্ছিল।



ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে সমুদ্র ডাকাতির শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেয়। তুরস্ক জানায়, ওই নৌবহরে তুর্কি নাগরিক ও সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। দেশটির অভিযোগ, গণহত্যাকারী ইসরাইলি সরকার শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগগুলোকেও আক্রমণ করছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোগান আরও বলেন, গত দুই বছরে ইসরাইল হিটলারের চেয়েও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে।



এর আগের সপ্তাহেই গাজামুখী আরও ৪০টির বেশি নৌকা আটক করে ইসরাইল, যাতে প্রায় ৪৫০ জনেরও বেশি কর্মী ছিলেন।



ইসরাইল পূর্বেও গাজাগামী জাহাজে হামলা চালিয়েছে, ত্রাণ সামগ্রী জব্দ করেছে এবং কর্মীদের আটক করে পরে বহিষ্কার করেছে। প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাসের গাজা উপত্যকায় ১৮ বছর ধরে ইসরাইল অবরোধ বজায় রেখেছে। চলতি বছরের মার্চে সীমান্ত বন্ধ করে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দিয়ে অবরোধ আরও কঠোর করা হয়। ফলে অঞ্চলটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়।



২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ১০০রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অব্যাহত বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত এই অঞ্চলটি এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post