বগুড়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে সরকারি রাস্তার পাশের ১৩৬টি গাছ বিক্রি করেছেন সাবেক বিএনপি নেতা ও এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিকের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। তবে টেন্ডারে নির্ধারিত ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের সঙ্গে বনজ ও ঔষধি প্রজাতির আরও দেড় শতাধিক গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে।
ঘটনার খবর পেয়ে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গত শনিবার অভিযান চালিয়ে গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের ন্যাংড়ার বাজার থেকে দরগাহাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে গাছ কাটা শুরু হয়। প্রথমে টেন্ডারের আওতায় থাকা ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ কাটা হলেও পরবর্তীতে হরিকতি, আমলকি ও মেহগনি। এই তিন প্রজাতির বনজ ও ঔষধি গাছও ফেলে দেওয়া হয়।
জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাবেক সহ পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক টেন্ডারের মাধ্যমে শিকারপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরমান আকন্দের কাছে রাস্তার পাশের ১৩৬টি গাছ মাত্র চার লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন। পরে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিপনের নেতৃত্বে গাছ কাটা শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানান, গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, এলজিইডি ওই সড়কটি সম্প্রসারণ করবে। তাই আগেই গাছ বিক্রি করা হয়েছে।
গাছ ক্রেতা রাকিবুল ইসলাম শিপন বলেন, আমি রাজনৈতিকভাবে নির্যাতিত। দলের কর্মীদের টিকিয়ে রাখতে ব্যবসা করি। ইউনিয়ন পরিষদের টেন্ডারে বৈধভাবে গাছগুলো কিনেছি।
অন্যদিকে আরমান আকন্দ বলেন, আমি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। শ্রমিকরা বুঝতে না পেরে কয়েকটি বনজ গাছ ভুল করে কেটেছে।
সাবেক বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক বলেন, উপজেলা পরিষদের সভায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি ইউএনও অবগত ছিলেন। এখন সারাদেশেই এই দুই প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে।
তবে বগুড়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি রাস্তার গাছ বিক্রি বা কাটার অনুমতি দিতে পারেন না।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ মে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ রোপণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এসব গাছ প্রচুর পানি শোষণ করে মাটির আর্দ্রতা নষ্ট করে ফেলে এবং পাতার টক্সিন মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে, ফলে অন্য কোনো গাছ জন্মাতে পারে না।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, নিষিদ্ধ প্রজাতির গাছ বিক্রির অনুমতি থাকলেও অন্যান্য বনজ ও ঔষধি গাছ কাটা অনিয়ম। অভিযোগ পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ চন্দ্র সরকারকে পাঠিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment