ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, কিছু বিপথগামী ছাড়া ছাত্রদলের সবাই নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। আমরা এটা স্বীকার করে রাজনীতি করি। আজকের দিন পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছি। আমাদের কোনো সমর্থককে আমরা অস্বীকার করি না। পদ না থাকলেও তাদের আমরা স্বীকার করি।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা হাসিবুল ইসলামের অকাল মৃত্যু ও জোবায়েদ হোসেনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাকিব বলেন, আমরা সমাজে অবদান রাখা ব্যক্তিদের ভুলে যাই। তবে দোয়া মাহফিলের এই সংস্কৃতি ধরে রাখতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমাদের সত্য ও নীতি-নৈতিকতার পথে থাকতে হবে। সর্বক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে হবে। জোবায়েদ হত্যার দিন স্থানীয়রা দেখেছে, যদি কোনো শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা তার প্রতিবাদ জানাবে। তবে শিক্ষার্থীদের যেন স্থানীয়দের দ্বারা ক্ষতির সম্মুখীন না হতে হয়, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে ছাত্রদলের পদধারী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। তারা বেঁচে থাকাকালীন ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী (ওয়েল অ্যাক্টিভিস্ট) ছিলেন। আমরা দেখেছি, তাদের মৃত্যুর পর সবাই তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কারণ, তাদের নৈতিক চরিত্র ছিল উন্নতমানের। আমরা বলি না আমাদের শতভাগ নেতাকর্মী জোবায়েদ ও সাম্যের মতো, কিছু খারাপ আছে। কিছু বিপথগামী ছাড়া ছাত্রদলের সবাই নৈতিক চরিত্রের অধিকারী।
যারা হত্যা ও গুমের শিকার হয়েছেন, তাদের স্মরণ করতে প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে এবং জবি (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) শাখা ছাত্রদলের প্রশংসা করে রাকিব বলেন, শাহাদাত বরণ করার পর প্রশংসা ছাড়াও তারা জীবিত অবস্থায়ও প্রশংসার দাবিদার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সর্বদা প্রশংসার দাবিদার। চাঁদাবাজদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা বাসস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেছে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ হয়েছেন। কিন্তু জুলাই পরবর্তী সময়ে সাম্য ও জোবায়েদের মতো নেতাকর্মীদের ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। পারভেজ হত্যার পরও প্রশাসন গড়িমসি করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বাবা-মার পরে শিক্ষক সমাজই শিক্ষার্থীদের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন। কিন্তু মৃত্যু কষ্টের। আমরা যাদেরকে আঘাত করি না, তাদের মৃত্যু সভায় আমাদের উপস্থিত হতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত কষ্টের।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, হাসিব দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করার জন্য ভূমিকা রেখেছে। তার সেই লক্ষ্য পূরণ করতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। একই সাথে জোবায়েদের মৃত্যুর সঠিক বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। আমরা খবর পেয়েছি, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এটি দেওয়া হবে। আজ সকালেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বনামধন্য একজন উকিল দেওয়ার ফাইল তৈরি করেছি। নিয়মতান্ত্রিক যত উপায় আছে, সব দিক থেকে চেষ্টা করব।
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিনের সঞ্চালনায় এবং আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন, গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং জাতীয়তাবাদী যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এছাড়া হাসিবুর রহমান ও জোবায়েদ হোসেনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Post a Comment