দীর্ঘদিন ধরে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগরের রাশিদা বেগমের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ক্যানসারে আক্রান্ত এক অসহায় নারীর পাশে দাঁড়িয়ে খুমেকের মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ স্থাপনে রাশিদার পরিবার ও স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ও আশার আলো দেখা দিয়েছে।


এর আগে রাশিদার দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে দৈনিক কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে খুলনাসহ সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে।


পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তার চিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাশিদার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চিকিৎসা, ওষুধ, অপারেশনসহ যাবতীয় খরচ বহন করা হবে।


মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের বারান্দায় রাশিদা বেগমকে দেখতে যান খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম। এ সময় তিনি রাশিদার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং নিজেই তার সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন।


ডা. মো. কাজী আইনুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যেই তার ব্রেস্টে একটি সার্জারি করা হয়েছে। তার ছয়টি কেমো সাইকেল হবে। ইতোমধ্যে ৪টি হয়েছে। বাকি দুটো হওয়ার পর আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। টিউমারটির সাইজ যখন ছোট হয় আসবে এরপর তার পূর্ণাঙ্গ অপারেশন করা হবে। খুলনা মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে রাশিদাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।


তিনি বলেন, আমাদের এখানে মাত্র ৫০০ বেড আছে। কিন্তু ১ হাজার ৬০০ রোগী আছে। তারপরেও একটি বেডের ব্যবস্থা করার জন্য আমি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।


জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী রাশিদা বেগম দীর্ঘদিন ধরে ব্রেস্ট ক্যানসারে ভুগছেন। স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। দৈনন্দিন জীবনের অভাব-অনটনের মাঝেই তারা কোনো রকমে দিন কাটাতেন। দুই বছর আগে রাশিদার ডান স্তনে একটি টিউমার ধরা পড়ে। তখন স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে অপারেশনের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণ করা হয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ‘বায়োপসি’ না হওয়ায় রোগটি যে ক্যানসারজনিত তা তখন শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।


ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে ধীরে ধীরে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে রাশিদা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার ডান স্তনে পচন ধরেছে, ক্ষতস্থানে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর এ নারী এখন হাসপাতালের শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিন পার করছেন।


রাশিদার স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘খুলনা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার ও প্রশাসন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এটা যেন আল্লাহর রহমত ছাড়া কিছু নয়। আমরা তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।’


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা রাশিদা বেগমের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। তিনি যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পান, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট।


খুলনা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবক কমলেশ বলেন, এ সিদ্ধান্ত শুধু একজন রোগীর নয়, পুরো সমাজে এক ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন মানবিক পদক্ষেপ মানুষের মধ্যে নতুন করে আস্থা ও আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে।


মানবিক এ উদ্যোগ প্রমাণ করে- সামান্য মনোযোগ ও সহমর্মিতা এক অসহায় জীবনের জন্য হতে পারে জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। রাশিদা বেগমের চিকিৎসা এগিয়ে চলেছে, আর তার পরিবারের চোখে ফুটে উঠছে এক নতুন স্বপ্ন বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা।


Post a Comment

Previous Post Next Post